২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়
বাংলাদেশে বিডিআর বিদ্রোহের প্রায় দেড় দশক পর ঘটনার পুনঃতদন্ত শুরু করেছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। গঠন করা হয়েছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন, যার লক্ষ্য পিলখানা হত্যাকাণ্ডের 'প্রকৃত ঘটনা' উদঘাটন ও জড়িতদের শনাক্ত করা।
২০০৯ সালের ওই বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই নানান প্রশ্ন তুলে আসছিলেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগ রয়েছে যে, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জড়িত থাকার পরও তদন্তে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
ওই ঘটনার পেছনে বিদেশি সংস্থার হাত ছিল বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। যদিও গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার বরাবরই বিষয়গুলো অস্বীকার করে এসেছে।
কিন্তু পাঁচই অগাস্টের পট পরিবর্তনের পর অভিযোগগুলো নতুন করে আলোচনায় আসে। নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও ঘটনার পুনঃতদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠনের জোরালো দাবি তোলা হয়।
এ অবস্থায় গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
কিন্তু ঘটনার দেড় দশক পরে যখন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের মধ্যেই অনেকেই বেঁচে নেই এবং আলামত নষ্ট হয়ে গেছে, সেখানে প্রকৃত ঘটনা কীভাবে এবং কতটুকু সামনে আনা সম্ভব হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
যদিও কমিশন বলছে যে, নানান চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সফলভাবে তদন্তকাজ শেষ করবেন।
"আমাদের বিশ্বাস, আমরা সন্তোষজনকভাবে এই কাজ সম্পন্ন করতে পারবো এবং সত্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো," বিবিসি বাংলাকে বলেন কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান।
কমিশন এমন দাবি করলেও তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিদ্রোহের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য ও তাদের স্বজনরা।
"যারা ঘটনার মধ্যেই ছিল, তাদের সঙ্গে কথা না বললে সেই তদন্ত প্রতিবেদন কীভাবে নিরপেক্ষ হবে?" বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বিচারের মুখোমুখি হওয়া বিডিআর সদস্য ও তাদের স্বজনদের প্ল্যাটফর্ম বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ফয়জুল আলম।
উল্লেখ্য যে, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরণ আইনে করা মামলায় ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। এছাড়া আরও অন্তত ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।